বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

অর্থনীতির জন্য এক নেতিবাচক প্রবণতা

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাত হচ্ছে এর প্রাণবায়ু। শুধু বাংলাদেশইবা বলি কেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রায় সব দেশের জন্য এ কথা খাটে। তাই আমাদের উচিত বেসরকারি খাতের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া। বেসরকারি খাত মূলত চলে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে। বেসরকারি খাতে যখন ঋণ সরবরাহ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে, তখন বেসরকারি খাত গতি হারায়। আর এর প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়ে। তাই অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে চলেছে। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিক সে বার্তাই আমাদের জানিয়েছে।
প্রকাশিত খবর মতেÑ চলতি বছরের আগস্ট মাস শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত জুলাইয়ে তা ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। অথচ জানুয়ারিতে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এই হার ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে কম। ওই সময়ে ওই ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর অপর অর্থ কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ। তাই স্বভাবতই ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেলে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। এর ফলে বাড়ে বেকারত্ব। বেকারত্ব বাড়লে এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজে বাড়তে বাধ্য। যেমন বেকারত্ব বাড়লে সমাজে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বাংলাদেশে সময়ের সাথে ক্রমেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটছে। আমরা যতই বলি না কেন, দেশে উত্তম বিনিয়োগ পরিবেশ বিদ্যমান; বিদেশীরা তা যথা কারণেই বিশ্বাস করতে চায় না। সরকার সারা বিশ্বে বলে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। দেশে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার সুযোগ দিচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশীদের জন্য রয়েছে প্রচুর সুযোগ; কিন্তু এসব কিছুর পরও বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি বেসরকারি খাতের ঋণ হুহু করে বাড়ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। ফলে ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সালের শুরুতেই ঋণ অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। এখনো নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ব্যাপারে ব্যাংকগুলো নানা বাধার মুখোমুখি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে তারল্যসঙ্কট। তারা আমানত পাচ্ছে না। ফলে চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে পারছে না। তা ছাড়া যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো সেগুলো নানা হিসাব-নিকাশ করে ঋণ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণ কমে যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুললে চলবে না, বেসরকারি খাত স্থবির হয়ে পড়লে অর্থনীতিও গতি হারাতে বাধ্য। তাই বেসরকারি খাতে চাহিদা মতো ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা এ ব্যাপারে সচেতন দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হবেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ